পট (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - চারু ও কারুকলা বাংলাদেশের লোকশিল্প ও কারুশিল্প | - | NCTB BOOK
52
52

বাংলার লোকশিল্পের অন্যতম একটি নিদর্শন হচ্ছে পট। বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে আঁকা হতো। পট্ট বা কাপড় শব্দ থেকে পট শব্দের উৎপত্রি। জড়ানো পট ও চৌকা পট-এ দুই ধরনের আঁকা হতো। আর এর শিল্পীরা পটুয়া নামে পরিচিত। জড়ানো পট বেশ বড়ো ও লম্বা আকারের হয়ে থাকে। একটা পটে পর পর লম্বাভাবে সাজানো থাকে অনেকগুলো টুকরো ছবি। এ ছবিগুলো কোনো লোককাহিনি বা ধর্মীয় কাহিনির চিত্ররূপ। বুদ্ধের জীবনী, জাতকের গল্প, কৃষ্ণলীলা, রামায়ণ, বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের কাহিনি, মহররমের কাহিনি, সোনাই-মাধব এরকম বহু বিষয়ের উপর পট আঁকা হতো। পরবর্তীকালে লৌকিক পির গাজীর জীবনের গল্প, কালুগাজী-চম্পাবতীর গল্প নিয়েও পট আঁকা হয়েছে। এগুলো গাজীর পট নামে খ্যাত।

এই পটগুলোর দু প্রান্তে দুটি কাঠি লাগিয়ে তার সাথে জড়িয়ে রাখা হতো। কাপড়ের ওপর কাগজ লাগিয়ে তার ওপর চিত্র আঁকা হতো। তাছাড়া কাপড়ের ওপর আঠালো রং দিয়েও চিত্র আঁকা হতো। গ্রামে কিছু লোক এই পট নিয়ে ঘুরে ঘুরে পটের গল্প সুন্দর সুর করে বর্ণনা করেন। ছেলে-বুড়ো ও মেয়েরা সবাই ভিড় করে এসব পটের গল্প-কাহিনি শোনেন এবং খুব আনন্দ পান।

চৌক পট ছোটো আকারের কাগজের ওপর আঁকা চিত্র। সাধারণত ১ ফুট লম্বা ও ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি চওড়া হয়। এগুলোর মধ্যে কালীঘাটের পট ছিল বিখ্যাত। কালীঘাটের পটের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য ও শিল্পমান ছিল অসাধারণ। এগুলোতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের জীবনযাপনের ভালোমন্দ দিক, সামাজিক আচার-অনাচার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদির চিত্রায়ন করা হতো। মৃত ব্যক্তির স্বর্গপ্রাপ্তির জন্য চক্ষুদান পট নামে একরকম পট আঁকতেন পটুয়ারা। মৃত ব্যক্তির চক্ষুবিহীন ছবি এঁকে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাতে চোখ এঁকে দেওয়া হতো। যাতে করে সে স্বর্গের পথ দেখতে পায়।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;